০২:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

ইউরিয়া সারের তীব্র সংকটে বিপর্যস্ত হাতিয়ার কৃষকরা : দাম বেশি, সরবরাহ কম

  • নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ০৩:০২:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ৩৩৫

 সাব ডিলার মোকামে বিশৃঙ্খলা, ঘটছে মারপিট ও দোকান ভাঙচুর

ছায়েদ আহামেদ : নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ইউরিয়া সারের ভয়াবহ সংকটে বিপাকে পড়েছেন হাজারও কৃষক। দাম আকাশচুম্বী, তবুও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল। অনেক কৃষক দিনের পর দিন দোকানে ঘুরে সামান্য সারও পাচ্ছেন না। এমনকি কোথাও কোথাও সারের জন্য সংঘর্ষ, মারপিট ও দোকান ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।

রোববার (৫ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে ওছখালী বাজারে পৌরসভার সাব ডিলার এমরানের দোকানে সার বিতরণের সময় কৃষকদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে একজন কৃষকের জামা ছিঁড়ে যায় এবং ভিড়ের চাপে পড়ে আরেকজন ঘটনাস্থলেই মল ত্যাগ করে ফেলেন। সরেজমিন দেখা গেছে— বহু কৃষক হাতে আইডি কার্ড নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও সার না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।

এর আগে, বুধবার তমরদ্দি বাজারে সাব ডিলার নিজাম চৌধুরীর দোকানে সার না পাওয়াকে কেন্দ্র করে দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয়।

নিজাম চৌধুরী বলেন, “সার পেয়েছি ৯০০ বস্তা, কিন্তু কৃষক তিন হাজার। সবাইকে দেওয়া সম্ভব না।”
তিনি উপজেলা সার ডিলার কল্যাণ সমিতির সভাপতির দায়িত্বে আছেন দাবি করে বলেন, “অক্টোবর মাসে ২ হাজার ৫০০ টন চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ এসেছে মাত্র ৫৩৯ টন। এতে ডিলাররা হিমশিম খাচ্ছেন, কৃষকদের রোষানলেও পড়ছেন।”

এদিকে তমরদ্দি, পৌরসভা, বুড়িরচরসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা অভিযোগ করেছেন— সাব ডিলাররা এক বস্তা ইউরিয়া সার ১ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। খুচরা বিক্রেতারা তা ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। অনেক জায়গায় ভেজাল কীটনাশকও একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে।

বুড়িরচর ইউনিয়নের কৃষক বাসুদেব চন্দ্র দাস (৬৫) বলেন, “৮ বস্তা সার লাগে, ১ বস্তাও পাই না। দুই সপ্তাহ ধরে দোকান ঘুরে ঘুরে শেষ।”
তমরদ্দি খাসের হাটের আব্দুল মাজেদ (৪৫) বলেন, “এমন সংকট আগে কোনো দিন দেখি নাই। জমি পড়ে আছে, কিন্তু সার নাই।”

হাতিয়া উপজেলার আয়তন ২,১০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি, যা পুরো নোয়াখালী জেলার প্রায় অর্ধেক। এখানে আবাদি জমির পরিমাণ বেশি হওয়ায় সারের চাহিদাও তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সেই অনুযায়ী বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। ফলে সংকট আরও গভীর হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সবুজ জানান, “এ বছর হাতিয়ায় ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ৩ হাজার ৩৫০ টন সারের চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ এসেছে মাত্র ১ হাজার ৪৭৪ টন।”

নোয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আশীষ কুমার কর বলেন, “আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। হাতিয়ার জন্য এবার পরিকল্পনা ভুল ছিল। পরবর্তী সময় থেকে সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া হবে। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সংকট কিছুটা কমে আসবে বলে আশা করছি।”

সর্বাধিক পঠিত

কোম্পানীগঞ্জে পুকুরে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

ইউরিয়া সারের তীব্র সংকটে বিপর্যস্ত হাতিয়ার কৃষকরা : দাম বেশি, সরবরাহ কম

আপডেট: ০৩:০২:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫

 সাব ডিলার মোকামে বিশৃঙ্খলা, ঘটছে মারপিট ও দোকান ভাঙচুর

ছায়েদ আহামেদ : নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ইউরিয়া সারের ভয়াবহ সংকটে বিপাকে পড়েছেন হাজারও কৃষক। দাম আকাশচুম্বী, তবুও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল। অনেক কৃষক দিনের পর দিন দোকানে ঘুরে সামান্য সারও পাচ্ছেন না। এমনকি কোথাও কোথাও সারের জন্য সংঘর্ষ, মারপিট ও দোকান ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।

রোববার (৫ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে ওছখালী বাজারে পৌরসভার সাব ডিলার এমরানের দোকানে সার বিতরণের সময় কৃষকদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে একজন কৃষকের জামা ছিঁড়ে যায় এবং ভিড়ের চাপে পড়ে আরেকজন ঘটনাস্থলেই মল ত্যাগ করে ফেলেন। সরেজমিন দেখা গেছে— বহু কৃষক হাতে আইডি কার্ড নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও সার না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।

এর আগে, বুধবার তমরদ্দি বাজারে সাব ডিলার নিজাম চৌধুরীর দোকানে সার না পাওয়াকে কেন্দ্র করে দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয়।

নিজাম চৌধুরী বলেন, “সার পেয়েছি ৯০০ বস্তা, কিন্তু কৃষক তিন হাজার। সবাইকে দেওয়া সম্ভব না।”
তিনি উপজেলা সার ডিলার কল্যাণ সমিতির সভাপতির দায়িত্বে আছেন দাবি করে বলেন, “অক্টোবর মাসে ২ হাজার ৫০০ টন চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ এসেছে মাত্র ৫৩৯ টন। এতে ডিলাররা হিমশিম খাচ্ছেন, কৃষকদের রোষানলেও পড়ছেন।”

এদিকে তমরদ্দি, পৌরসভা, বুড়িরচরসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা অভিযোগ করেছেন— সাব ডিলাররা এক বস্তা ইউরিয়া সার ১ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। খুচরা বিক্রেতারা তা ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। অনেক জায়গায় ভেজাল কীটনাশকও একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে।

বুড়িরচর ইউনিয়নের কৃষক বাসুদেব চন্দ্র দাস (৬৫) বলেন, “৮ বস্তা সার লাগে, ১ বস্তাও পাই না। দুই সপ্তাহ ধরে দোকান ঘুরে ঘুরে শেষ।”
তমরদ্দি খাসের হাটের আব্দুল মাজেদ (৪৫) বলেন, “এমন সংকট আগে কোনো দিন দেখি নাই। জমি পড়ে আছে, কিন্তু সার নাই।”

হাতিয়া উপজেলার আয়তন ২,১০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি, যা পুরো নোয়াখালী জেলার প্রায় অর্ধেক। এখানে আবাদি জমির পরিমাণ বেশি হওয়ায় সারের চাহিদাও তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সেই অনুযায়ী বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। ফলে সংকট আরও গভীর হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সবুজ জানান, “এ বছর হাতিয়ায় ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ৩ হাজার ৩৫০ টন সারের চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ এসেছে মাত্র ১ হাজার ৪৭৪ টন।”

নোয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আশীষ কুমার কর বলেন, “আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। হাতিয়ার জন্য এবার পরিকল্পনা ভুল ছিল। পরবর্তী সময় থেকে সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া হবে। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সংকট কিছুটা কমে আসবে বলে আশা করছি।”