০২:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

ফল চাষ করে খাদ্যশক্তিতে ভূমিকা রাখছেন হাতিয়ার কৃষিউদ্যোক্তা শরীফ মিয়া

  • নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ১২:৫৯:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৯৮

ছায়েদ আহামেদ :  বিভিন্ন প্রকারের ফলের চাষ করে এলাকায় ফলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হাতিয়ার শরীফ মিয়া নামের এক কৃষি উদ্যোক্তা। শখের বসে ২০২৪ সালের মে মাসে বসতবাড়ির আঙ্গিনার পতিত জমিসহ ২ একর জমিতে প্রথমে ৫শ’টি বল সুন্দরী জাতের কুলের চারা রোপণ করেন। ভালো ফলন পাওয়ায় জমির পরিমাণ বাড়াতে থাকেন এবং শুরু করেন দেশি-বিদেশি বিভিন্নরকমের ফল চাষ। ড্রাগন, পেপে, লেবু, কমলা ও স্ট্রবেরি’র সারিবদ্ধ বাগানের সুন্দর দৃশ্য তো আছেই। সেই সাথে প্রস্তুত রয়েছে দুই জাতের বিদেশি ফলের চারা রোপণের নতুন মাঠও। সমানতালে বাগানের আঁটির ফাঁকে ফাঁকে করেছেন মিষ্টি কুমড়ার চাষও। 

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের চরকৈলাশ গ্রামে শরীফ উদ্দিনের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, শিশু-কিশোর’রা যে যার মতো করে গাছ থেকে বরই ছিঁড়ে খাচ্ছে। কিছু কিনতে এসে আরো কিছু পকেটে-প্যাকেটে করেও নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। বাদ যাচ্ছেন না বয়স্করাও। বেপারিরাও পাচ্ছেন অন্য বাগানিদের চেয়ে ভালো সুবিধা। এতে একটুও কার্পন্যতা করছেন না শরীফ মিয়া। বরং এসবে আনন্দেই পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। তার একই সাথে প্রধান সড়কের পূর্বপাশে চরঈশ্বর সীমানায়ও দেখা যায় ড্রাগন,পেপে এবং লেবু বাগানেরও সুন্দর দৃশ্য। বাগান দু’টির পরিচর্যায় কাজ করছেন ৬জন শ্রমিক।  কৃষি উদ্যোক্তা শরীফ উদ্দিন বলেন, আমাদের পার্শ্বর্তী ফলচাষী খানসাবের পরামর্শে প্রথমে বাড়ির আঙ্গিনায় কিছু পতিত জমিতে বরোই চাষ শুরু করি। যাতে নিজেদের ফলের চাহিদা মেটানো যায়। পরে ফলন ভাল দেখে জমির পরিমাণও বাড়াই এবং কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সাপোর্ট নিয়ে বিভিন্নরকমের ফল চাষ শুরু করি। এতে আশপাশের মানুষও যেমন খেতে পারে তেমনি বিক্রি করেও ভাল সুবিধা পায় বলে জানান এই কৃষি উদ্যোক্তা। 

সোহান নামের এক চৌদ্দ বছর বয়সী কিশোর জানান, শরীফ মিয়ার বাগানে এসে আমরা ইচ্ছেমতো ফল খেলেও তিনি না করেন না। কিছু কিনলে অতিরিক্তও আরো কিছু দিয়ে দেন তিনি।  তার দেখায় দেড় একর জমি ভাড়া নিয়ে ফল চাষ করে লাভবান হয়েছেন বলে জানান পার্শ্ববর্তী শাহাদাত হোসেন নামের এক ফল চাষী। 

হাতিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুবাস চন্দ্র পাল জানান, চরকৈলাশ গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা শরিফুদ্দীন তার প্রায় দেড় একর পতিত জমিতে এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় এবং উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে বলসুন্দরী জাতের কুল চাষ করেন। ৮ মাসে এ কুল বাগান থেকে তিনি প্রায় ৩ লক্ষ টাকা লাভ পান৷ আর্থিক লাভের পাশাপাশি তিনি স্থানীয় মানুষদের মাঝে স্বল্পমূল্যে/ বিনামূল্যে কুল বিতরণ করে এলাকার মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করছেন। কুল চাষে লাভবান হয়ে সামনে আরো প্রায় দুই একর জমিতে  বিভিন্ন প্রকার ফল চাষে  উদ্যোগ গ্রহন করেন। বেকার যুবকেরা তার মতো কৃষি কাজে এগিয়ে এলে নিজের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিতে অবদান রাখতে পারবে বলে জানান এই কৃষিবিদ। 

ফলফলাদি উৎপাদনের গুরুত্ব নিয়ে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার(রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডাঃ মোঃ খালেদ সাইফুল্লাহ’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ফলের মধ্যে খাদ্যশক্তি থাকে, যা শরীরের ভেতর থেকে ক্ষতিকর চর্বি বের করে দেয়। তাই ফল সবার জন্য উপকারী। পুষ্টিমানের দিক থেকেও সব ফেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও খনিজ পদার্থ থাকে। বিশেষ করে রঙিন ফলে লাইকোপেট আর এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, তা শরীরের ভেতরের বিষাক্ত জিনিস দূর করে দেয় এবং ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।  

সর্বাধিক পঠিত

বেগমগঞ্জ উপজেলা হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি

ফল চাষ করে খাদ্যশক্তিতে ভূমিকা রাখছেন হাতিয়ার কৃষিউদ্যোক্তা শরীফ মিয়া

আপডেট: ১২:৫৯:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ছায়েদ আহামেদ :  বিভিন্ন প্রকারের ফলের চাষ করে এলাকায় ফলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হাতিয়ার শরীফ মিয়া নামের এক কৃষি উদ্যোক্তা। শখের বসে ২০২৪ সালের মে মাসে বসতবাড়ির আঙ্গিনার পতিত জমিসহ ২ একর জমিতে প্রথমে ৫শ’টি বল সুন্দরী জাতের কুলের চারা রোপণ করেন। ভালো ফলন পাওয়ায় জমির পরিমাণ বাড়াতে থাকেন এবং শুরু করেন দেশি-বিদেশি বিভিন্নরকমের ফল চাষ। ড্রাগন, পেপে, লেবু, কমলা ও স্ট্রবেরি’র সারিবদ্ধ বাগানের সুন্দর দৃশ্য তো আছেই। সেই সাথে প্রস্তুত রয়েছে দুই জাতের বিদেশি ফলের চারা রোপণের নতুন মাঠও। সমানতালে বাগানের আঁটির ফাঁকে ফাঁকে করেছেন মিষ্টি কুমড়ার চাষও। 

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের চরকৈলাশ গ্রামে শরীফ উদ্দিনের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, শিশু-কিশোর’রা যে যার মতো করে গাছ থেকে বরই ছিঁড়ে খাচ্ছে। কিছু কিনতে এসে আরো কিছু পকেটে-প্যাকেটে করেও নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। বাদ যাচ্ছেন না বয়স্করাও। বেপারিরাও পাচ্ছেন অন্য বাগানিদের চেয়ে ভালো সুবিধা। এতে একটুও কার্পন্যতা করছেন না শরীফ মিয়া। বরং এসবে আনন্দেই পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। তার একই সাথে প্রধান সড়কের পূর্বপাশে চরঈশ্বর সীমানায়ও দেখা যায় ড্রাগন,পেপে এবং লেবু বাগানেরও সুন্দর দৃশ্য। বাগান দু’টির পরিচর্যায় কাজ করছেন ৬জন শ্রমিক।  কৃষি উদ্যোক্তা শরীফ উদ্দিন বলেন, আমাদের পার্শ্বর্তী ফলচাষী খানসাবের পরামর্শে প্রথমে বাড়ির আঙ্গিনায় কিছু পতিত জমিতে বরোই চাষ শুরু করি। যাতে নিজেদের ফলের চাহিদা মেটানো যায়। পরে ফলন ভাল দেখে জমির পরিমাণও বাড়াই এবং কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সাপোর্ট নিয়ে বিভিন্নরকমের ফল চাষ শুরু করি। এতে আশপাশের মানুষও যেমন খেতে পারে তেমনি বিক্রি করেও ভাল সুবিধা পায় বলে জানান এই কৃষি উদ্যোক্তা। 

সোহান নামের এক চৌদ্দ বছর বয়সী কিশোর জানান, শরীফ মিয়ার বাগানে এসে আমরা ইচ্ছেমতো ফল খেলেও তিনি না করেন না। কিছু কিনলে অতিরিক্তও আরো কিছু দিয়ে দেন তিনি।  তার দেখায় দেড় একর জমি ভাড়া নিয়ে ফল চাষ করে লাভবান হয়েছেন বলে জানান পার্শ্ববর্তী শাহাদাত হোসেন নামের এক ফল চাষী। 

হাতিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুবাস চন্দ্র পাল জানান, চরকৈলাশ গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা শরিফুদ্দীন তার প্রায় দেড় একর পতিত জমিতে এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় এবং উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে বলসুন্দরী জাতের কুল চাষ করেন। ৮ মাসে এ কুল বাগান থেকে তিনি প্রায় ৩ লক্ষ টাকা লাভ পান৷ আর্থিক লাভের পাশাপাশি তিনি স্থানীয় মানুষদের মাঝে স্বল্পমূল্যে/ বিনামূল্যে কুল বিতরণ করে এলাকার মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করছেন। কুল চাষে লাভবান হয়ে সামনে আরো প্রায় দুই একর জমিতে  বিভিন্ন প্রকার ফল চাষে  উদ্যোগ গ্রহন করেন। বেকার যুবকেরা তার মতো কৃষি কাজে এগিয়ে এলে নিজের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিতে অবদান রাখতে পারবে বলে জানান এই কৃষিবিদ। 

ফলফলাদি উৎপাদনের গুরুত্ব নিয়ে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার(রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডাঃ মোঃ খালেদ সাইফুল্লাহ’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ফলের মধ্যে খাদ্যশক্তি থাকে, যা শরীরের ভেতর থেকে ক্ষতিকর চর্বি বের করে দেয়। তাই ফল সবার জন্য উপকারী। পুষ্টিমানের দিক থেকেও সব ফেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও খনিজ পদার্থ থাকে। বিশেষ করে রঙিন ফলে লাইকোপেট আর এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, তা শরীরের ভেতরের বিষাক্ত জিনিস দূর করে দেয় এবং ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।