০৬:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

হাতিয়ায় এক জমি বিক্রির বায়না পাঁচ জনের কাছে

  • নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ০৭:২৩:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১১১

ছায়েদ আহামেদ : হাতিয়া উপজেলার শুন্যেরচর মৌজার ৭১৩/১৬১৯ নং খতিয়ানের ৩০৬৬ দাগের ১.২৩ একর জমি কেনার জন্য বিক্রেতা মোজাম্মেলা বেগমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন। জমির দাম ঠিক হয়েছিল চার লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা। যা প্রতিকানি(১.৬০ একর) নির্ধারন করা হয়েছিল ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জমি কেনার জন্য বায়না হিসেবে ৪ লাখ ৫১ হাজার টাকাও দেন সাখাওয়াত হোসেন । কিন্তু মোজাম্মেলা বেগম তার স্বামী-সন্তানদের প্ররোচনায় বায়না দলিল রেজিস্ট্রি করে না দিয়ে টালবাহানা শুরু করেন।

একযোগ পেরিয়ে গেলেও মোজাম্মেলা বেগম জমি কবলা না দিয়ে গেল বছরের শেষের দিকে আবারও জমির নতুন দাম নির্ধারনে ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন সাখাওয়াত হোসেন থেকে। নিরুপায় হয়ে একপর্যায়ে থানার আশ্রয় নেন ভুক্তভোগী। পুলিশের তদন্ত ও উভয় পক্ষকে নিয়ে বারবার বৈঠকে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। এক জমি কীভাবে একেরপর এক সর্বশেষ ৫ম ব্যক্তির কাছে বিক্রি হয়। 

হাতিয়া থানায় ভুক্তভোগীর দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হাতিয়া পৌরসভা ৮নং ওয়ার্ড শুন্যেরচর গ্রামের মৃত মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মোঃ সাখাওয়াত হোসেন ৬নং পৌরওয়ার্ড নুরুজ্জামানের স্ত্রী মোজাম্মেলা বেগমের মালিকীয় জমি ক্রয়ে চুক্তিবদ্ধ হন ২০০৮ সালের জুলাই মাসে। ক্রেতার আপন খালা মোজাম্মেলা। মোজাম্মেলা বেগম ও তার স্বামী নুরুজ্জামান জমি বিক্রি করবে বলে মৌখিক চুক্তিবদ্ধ হয়। যেখানে কানিপ্রতি(১.৬০ একর) ৬ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা হারে ১.২৩ একর জমি বিক্রির জন্য ৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা গ্রহন করে ক্রেতা সাখাওয়াত হোসেন থেকে। সে মোতাবেক জমির দখলও বুঝিয়ে দেয় ক্রেতাকে। স্বাক্ষীদের মোকাবিলায় কথা ছিল- বিক্রেতা ও তার স্বামী জমির নামজারি করে ক্রেতার বরাবর যথাসময়ে সাফ- কবলা দলিল রেজিষ্ট্রি করে বাকী টাকা গ্রহন করবে। কিন্তু বিক্রেতা পক্ষ চল-চাতুরী করে বিভিন্ন অজুহাতে ক্রেতাকে ঘুরাতে থাকে।

এ নিয়ে ক্রেতা সাখাওয়াত হোসেন স্বাক্ষীদের( ক্রেতার ছোট খালু আব্দুল কাইয়ুম, খালাতো ভাই আব্দুল মাজেদ পলাশ এবং বিক্রেতাদের একই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাইন উদ্দিন সহ অন্যান্যদের)কে অবহিত করলে বিক্রেতাপক্ষ নানান সমস্যার কথা বলেন। জমির মালিক মোজাম্মেলার স্বামী নুরুজ্জামান এরই ফাঁকে দুই ধাপে আরো এক লাখ ৮০ হাজার টাকা আমানত গ্রহন করে ক্রেতা থেকে।

জানা যায়, বিক্রেতা ও তার স্বামী নুরুজ্জামান এবং তাদের ছোট ছেলে আব্দুর রহমান অতি লোভে আরেক পক্ষের সাথে বেশী মূল্যে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যায়। ফলে আবারও সামাজিক সালিশি বৈঠকে জমির নতুন মূল্য নির্ধারন হয় ২০২৪ সালের জুন মাসে। কানিপ্রতি(১.৬০একর) ৩৮ লাখ টাকা করে ১.২৩ একর জমির মূল্য হারে ক্রেতার কাছ থেকে বিক্রেতা মোজাম্মেলা ও তার ছোট ছেলে আব্দুর রহমান এবার ব্যাংক চেকের মাধ্যমে গ্রহন করে ৬ লাখ টাকা। চেক ছাড়াও বিক্রেতার ছেলে আব্দুর রহমান ক্রেতার কাছ থেকে আরো এক লাখ ৩০ হাজার টাকা গ্রহন করে। তবুও অর্থলোভ মিটলো না বিক্রেতা পক্ষের।

২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখে নতুন করে রেজিস্ট্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হলেন অপর তিন ব্যক্তির সাথে। এই চুক্তিতে কেবল ১.২৩ একর জমির মূল্য-ই ৩৮লাখ ৭৩ হাজার ১২৫ টাকা।  চুক্তি গ্রহীতারা হলেন- হাতিয়া পৌরসভা ৯নং ওয়ার্ডের মৃত মোশারেফ হোসেনের ছেলে তাজুল ইসলাম জাহেদ, একই ওয়ার্ডের নুরুল হকের ছেলে মো: আলমাছ এবং ৮নং ওয়ার্ডের আবু বক্কর ছিদ্দিক। 

এদিকে, এই তিন চুক্তি গ্রহীতাকে জমি ব্যবসার নগদ লাভ ধরিয়ে দিয়ে চতুর্থ ব্যক্তি- হাতিয়া পৌরসভা ৮নং ওয়ার্ডের মৃত মাহবুবুর রহমানের ছেলে মাহমুদুল হাসানকে চলতি মাসের ১০ তারিখে আমমোক্তার নামা কবলা দিয়া দেন মোজাম্মেলা বেগম। এ ঘটনায় অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীকে অর্ধেক টাকা নিয়ে দিতে পারলেও ক্ষতির অংকটা বড্ড ব্যবধানে থেকে যায় বলে উল্লেখ করেন ক্ষতিগ্রস্থ সাখাওয়াত হোসেন। ভুক্তভোগী বলেন,  আপন খালা,খালু এবং খালাতো ভাইদের এমন প্রতারণায় আমি বড় ক্ষতির মুখে পড়েছি। তারা বিভিন্নভাবে আমার থেকে প্রায় ১৪ লাখ টাকা নিয়ে আবার অনেকগুলো অস্বীকারও করে। এমন প্রতারকদের শাস্তির দাবী করেন তিনি। 

এবিষয়ে জমি বিক্রেতা মোজাম্মেলা বেগম তার স্বামী নুরুজ্জামান ও তাদের ছোট ছেলে আব্দুর রহমান বলেন, সাখাওয়াত হোসেনের সাথে আমাদের স্ট্যাম্পে চুক্তি হয়নি। যেখানে দাম বেশি পেয়েছি সেখানে বিক্রি করেছি।  অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাহবুবুর রহমান বলেন, দুই পক্ষ পরস্পর আত্মীয়। চুক্তিপত্র না থাকায় বিক্রেতাপক্ষ সুযোগ খাটিয়েছে। তবে বিক্রেতার স্বামী নুরুজ্জামান জমি বিক্রয়ের চুক্তির টাকা গ্রহনের স্বীকারোক্তিমুলক একটা ভিডিও রেকর্ড থাকাতে টাকা কিছু উদ্ধার করা গেছে। 

সর্বাধিক পঠিত

বেগমগঞ্জ উপজেলা হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি

হাতিয়ায় এক জমি বিক্রির বায়না পাঁচ জনের কাছে

আপডেট: ০৭:২৩:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ছায়েদ আহামেদ : হাতিয়া উপজেলার শুন্যেরচর মৌজার ৭১৩/১৬১৯ নং খতিয়ানের ৩০৬৬ দাগের ১.২৩ একর জমি কেনার জন্য বিক্রেতা মোজাম্মেলা বেগমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন। জমির দাম ঠিক হয়েছিল চার লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা। যা প্রতিকানি(১.৬০ একর) নির্ধারন করা হয়েছিল ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জমি কেনার জন্য বায়না হিসেবে ৪ লাখ ৫১ হাজার টাকাও দেন সাখাওয়াত হোসেন । কিন্তু মোজাম্মেলা বেগম তার স্বামী-সন্তানদের প্ররোচনায় বায়না দলিল রেজিস্ট্রি করে না দিয়ে টালবাহানা শুরু করেন।

একযোগ পেরিয়ে গেলেও মোজাম্মেলা বেগম জমি কবলা না দিয়ে গেল বছরের শেষের দিকে আবারও জমির নতুন দাম নির্ধারনে ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন সাখাওয়াত হোসেন থেকে। নিরুপায় হয়ে একপর্যায়ে থানার আশ্রয় নেন ভুক্তভোগী। পুলিশের তদন্ত ও উভয় পক্ষকে নিয়ে বারবার বৈঠকে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। এক জমি কীভাবে একেরপর এক সর্বশেষ ৫ম ব্যক্তির কাছে বিক্রি হয়। 

হাতিয়া থানায় ভুক্তভোগীর দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হাতিয়া পৌরসভা ৮নং ওয়ার্ড শুন্যেরচর গ্রামের মৃত মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মোঃ সাখাওয়াত হোসেন ৬নং পৌরওয়ার্ড নুরুজ্জামানের স্ত্রী মোজাম্মেলা বেগমের মালিকীয় জমি ক্রয়ে চুক্তিবদ্ধ হন ২০০৮ সালের জুলাই মাসে। ক্রেতার আপন খালা মোজাম্মেলা। মোজাম্মেলা বেগম ও তার স্বামী নুরুজ্জামান জমি বিক্রি করবে বলে মৌখিক চুক্তিবদ্ধ হয়। যেখানে কানিপ্রতি(১.৬০ একর) ৬ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা হারে ১.২৩ একর জমি বিক্রির জন্য ৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা গ্রহন করে ক্রেতা সাখাওয়াত হোসেন থেকে। সে মোতাবেক জমির দখলও বুঝিয়ে দেয় ক্রেতাকে। স্বাক্ষীদের মোকাবিলায় কথা ছিল- বিক্রেতা ও তার স্বামী জমির নামজারি করে ক্রেতার বরাবর যথাসময়ে সাফ- কবলা দলিল রেজিষ্ট্রি করে বাকী টাকা গ্রহন করবে। কিন্তু বিক্রেতা পক্ষ চল-চাতুরী করে বিভিন্ন অজুহাতে ক্রেতাকে ঘুরাতে থাকে।

এ নিয়ে ক্রেতা সাখাওয়াত হোসেন স্বাক্ষীদের( ক্রেতার ছোট খালু আব্দুল কাইয়ুম, খালাতো ভাই আব্দুল মাজেদ পলাশ এবং বিক্রেতাদের একই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাইন উদ্দিন সহ অন্যান্যদের)কে অবহিত করলে বিক্রেতাপক্ষ নানান সমস্যার কথা বলেন। জমির মালিক মোজাম্মেলার স্বামী নুরুজ্জামান এরই ফাঁকে দুই ধাপে আরো এক লাখ ৮০ হাজার টাকা আমানত গ্রহন করে ক্রেতা থেকে।

জানা যায়, বিক্রেতা ও তার স্বামী নুরুজ্জামান এবং তাদের ছোট ছেলে আব্দুর রহমান অতি লোভে আরেক পক্ষের সাথে বেশী মূল্যে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যায়। ফলে আবারও সামাজিক সালিশি বৈঠকে জমির নতুন মূল্য নির্ধারন হয় ২০২৪ সালের জুন মাসে। কানিপ্রতি(১.৬০একর) ৩৮ লাখ টাকা করে ১.২৩ একর জমির মূল্য হারে ক্রেতার কাছ থেকে বিক্রেতা মোজাম্মেলা ও তার ছোট ছেলে আব্দুর রহমান এবার ব্যাংক চেকের মাধ্যমে গ্রহন করে ৬ লাখ টাকা। চেক ছাড়াও বিক্রেতার ছেলে আব্দুর রহমান ক্রেতার কাছ থেকে আরো এক লাখ ৩০ হাজার টাকা গ্রহন করে। তবুও অর্থলোভ মিটলো না বিক্রেতা পক্ষের।

২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখে নতুন করে রেজিস্ট্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হলেন অপর তিন ব্যক্তির সাথে। এই চুক্তিতে কেবল ১.২৩ একর জমির মূল্য-ই ৩৮লাখ ৭৩ হাজার ১২৫ টাকা।  চুক্তি গ্রহীতারা হলেন- হাতিয়া পৌরসভা ৯নং ওয়ার্ডের মৃত মোশারেফ হোসেনের ছেলে তাজুল ইসলাম জাহেদ, একই ওয়ার্ডের নুরুল হকের ছেলে মো: আলমাছ এবং ৮নং ওয়ার্ডের আবু বক্কর ছিদ্দিক। 

এদিকে, এই তিন চুক্তি গ্রহীতাকে জমি ব্যবসার নগদ লাভ ধরিয়ে দিয়ে চতুর্থ ব্যক্তি- হাতিয়া পৌরসভা ৮নং ওয়ার্ডের মৃত মাহবুবুর রহমানের ছেলে মাহমুদুল হাসানকে চলতি মাসের ১০ তারিখে আমমোক্তার নামা কবলা দিয়া দেন মোজাম্মেলা বেগম। এ ঘটনায় অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীকে অর্ধেক টাকা নিয়ে দিতে পারলেও ক্ষতির অংকটা বড্ড ব্যবধানে থেকে যায় বলে উল্লেখ করেন ক্ষতিগ্রস্থ সাখাওয়াত হোসেন। ভুক্তভোগী বলেন,  আপন খালা,খালু এবং খালাতো ভাইদের এমন প্রতারণায় আমি বড় ক্ষতির মুখে পড়েছি। তারা বিভিন্নভাবে আমার থেকে প্রায় ১৪ লাখ টাকা নিয়ে আবার অনেকগুলো অস্বীকারও করে। এমন প্রতারকদের শাস্তির দাবী করেন তিনি। 

এবিষয়ে জমি বিক্রেতা মোজাম্মেলা বেগম তার স্বামী নুরুজ্জামান ও তাদের ছোট ছেলে আব্দুর রহমান বলেন, সাখাওয়াত হোসেনের সাথে আমাদের স্ট্যাম্পে চুক্তি হয়নি। যেখানে দাম বেশি পেয়েছি সেখানে বিক্রি করেছি।  অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাহবুবুর রহমান বলেন, দুই পক্ষ পরস্পর আত্মীয়। চুক্তিপত্র না থাকায় বিক্রেতাপক্ষ সুযোগ খাটিয়েছে। তবে বিক্রেতার স্বামী নুরুজ্জামান জমি বিক্রয়ের চুক্তির টাকা গ্রহনের স্বীকারোক্তিমুলক একটা ভিডিও রেকর্ড থাকাতে টাকা কিছু উদ্ধার করা গেছে।